এম. মনছুর আলম, চকরিয়া :
উৎসবমুখর মন নিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে স্ত্রী-সন্তান, নাতি-নাতনি ও পুত্রবধূকে নিয়ে কক্সবাজারে সমুদ্র দেখার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন এনামুল হক। পরিবারের সবার চোখে ছিল আনন্দ ও প্রত্যাশার ঝিলিক—সমুদ্র দেখা, বেড়ানো, আনন্দ করা। কিন্তু মুহূর্তের ব্যবধানে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল তাদের সব স্বপ্ন। সড়কে ঝরে গেল এক পরিবারের পাঁচজনের প্রাণ। দেখা হলো না আর কাঙ্ক্ষিত সেই সমুদ্রের।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হাঁসেরদীঘি সেনা ক্যাম্পের পাশের এলাকায় যাত্রীবাহী মারছা পরিবহনের বাস ও একটি পর্যটকবাহী নোহাগাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুজন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিনজন নারী মারা যান। এ ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন—কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চান্দিশকরা এলাকার এনামুল হকের স্ত্রী রুমানা আক্তার রুমি (৬০), মেয়ে সাদিয়া হক (২৪) (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী), পুত্রবধূ লিজা মজুমদার (২৫), তাঁর মা রাশেদা শিল্পী (৫২) এবং বোন ফারজানা মজুমদার (২৪) (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী)।
আহত হয়েছেন এনামুল হক, তাঁর ছেলে ও নোহাগাড়ির চালক আমিনুল হক এবং তাঁর ছয় বছর বয়সী শিশু পুত্র সাদমান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, সকাল থেকে টিপটিপ বৃষ্টিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল ছিল। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজারমুখী নোহাগাড়িটি ফাঁসিয়াখালীর হাঁসেরদীঘি এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মারছা পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। নোহাগাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ভেতরে থাকা নয়জন পর্যটক আটকা পড়ে গুরুতর আহত হন।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে চকরিয়ার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পাঠান। সেখানে পাঁচজন নারী মারা যান। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময়ের জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে, পরে হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ওসি (পরিদর্শক) মো. মেহেদী হাসান বলেন, “খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নোহাগাড়ির পাঁচজন নারী মারা গেছেন এবং তিনজন আহত রয়েছেন। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করা হয়েছে, বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।”
চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাশ জানান, নিহত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তাঁরা ঢাকায় রয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা চকরিয়ায় পৌঁছালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি জব্দ করে চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
